নুপুর মিথিলা :
‘‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’’- কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অতি পরিচিত কথাটি যথার্থ বলেই আমরা মানি। এক সময় নারী থাকতো ঘরের মধ্যে আবন্ধ। এখন সেই দিন পরিবর্তন হয়েছে। নারী তার নিজের মেধা-যোগ্যতা দিয়ে স্থান করে নিচ্ছে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে। ব্যবসা কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠার উচ্চে পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে দিনে দিনে। নিজেদের পৃথিবী নিজেরা সাজিয়ে নিচ্ছে নিজেদের মতো করে। দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের বিভিন্ন সূচকে অর্ধাংশ কর্মজীবী নারী ও সমানতালে ভূমিকা রেখে চলেছে।
একজন নারী ঘরে যতটুকু নিজের সাহসিকতার সাথে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন একই সাথে কর্মক্ষেত্রেও নিজস্ব সাহস পুঁজি করে গুছিয়ে আনছেন সবকিছু। যুগের সাথে তাল মিলাতে যেয়ে বর্তমান কর্মজীবী নারী দের অনেক বেশি চাপ সামলাতে হয়। অফিস আর বাসা মিলিয়ে দায়িত্ব আর কর্তব্যের তালিকা থাকে বিশাল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে কাজ করে ঘরে এসে আবার করতে হয় রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদেরকে সামলানোসহ সংসারের আরো নানান যাবতীয় কাজ। আরও থাকে প্রিয়জন আর পরিবারের প্রতি ভালোবাসার মনোযোগ। তাই চাকরিজীবী নারীদের নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া দরকার।
কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিন
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি হিসাব অনুযায়ী কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী দিনে কাজ করেন তিনগুণ। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত দেশের সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণের হার প্রায় ৩৬%। যা ২০০০ সালে ছিল মাত্র ২৫%। বাংলাদেশে মোট নারীর ৫৭% কর্মজীবী যেখানে ভারতে মাত্র ২৯%।
এবার আসি ঘরের কাজ কে কতটুকু করে সে বিষয়ে। জরিপ অনুযায়ী, পুরুষ ও নারী উভয়ই কর্মজীবী—এমন পারিবারিক পরিবেশে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজটি করতে হয় ওই নারীকে। আর কর্মজীবী পুরুষের রান্না করতে হয় মাত্র ২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। কর্মজীবী ১০০ নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেই করেন। আর ১০০ কর্মজীবী পুরুষের ক্ষেত্রে এই কাজ করেন মাত্র ১২ জন। কর্মজীবী নারীদের ৮৮ শতাংশ ঘর পরিষ্কারসহ বাসার বিভিন্ন জিনিস পরিস্কার রাখার কাজ করে থাকেন যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ।
তবে মজার ব্যাপার হলো, কর্মজীবী পুরুষদের ৭৭ শতাংশই ঘরের কেনাকাটার কাজটি করে থাকেন। অন্যদিকে ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার কাজটিও নিয়মিত করে থাকেন। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্বও বেশির ভাগ কর্মজীবী নারী কে সামলাতে হয়। ৫৩ শতাংশ কর্মজীবী নারী নিয়মিত এ কাজ করেন। বিপরীতে পরিবারের এসব সদস্যের যত্ন নেওয়ার কাজটি করে থাকেন ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ। কর্মজীবী একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। অপরদিকে একজন কর্মজীবী নারী কাজ করেন ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট।