মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম,ডেস্ক রিপোর্ট: আমি দুঃখিত!
আমি ভুল করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমরা বাহ্যিকভাবে দুঃখ প্রকাশের জন্য এই কথা গুলোই বলে থাকি।আমাদের ইন্দ্রীয় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য,দুঃখিত ব্যক্তির অনুতপ্তের বিষয়টি সাদরে আমরা মেনে নেই।আমাদের মনে ঐ দুঃখিত ব্যক্তির জন্য সঞ্চয় হয় একটি বিশ্বাস,যা জীবন্ত বাস্তব। মন প্রাণের অনুভূতি দ্বারা,সর্বদা আমরা এই বিশ্বাসের মধুস্বাদ আস্বাদন করতে থাকি। কিন্তু বিশ্বাসটা মুখস্থ ছিল নাকি সত্যিই অন্তর থেকে এসেছিল তা কিন্তু দুঃখিত ব্যক্তির পক্ষে কখনই জানা সম্ভব নয়। তবে এটাও সত্য দুঃখিত ব্যক্তি ছাড়া এটা অন্যের পক্ষে বুঝারও কোনো সুযোগ নেই যে,দুঃখিত ব্যক্তি একটি ভুল করে ছিলেন আর সেই ভুলের জন্যই তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন কি না। এখন যদি বিশ্বাসীদের কথা বলি,তবে বিশ্বাসীরা ঐ দুঃখিত ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করবে যতক্ষণ তিনি ঐ ভুল আর না করে। এই দুঃখিত ব্যক্তিটি যদি ঐ একই ভুলটা আবার করে, কিছুদিন পর পুনরায় আবার করে,তবে বিশ্বাসীরাও ঐ ব্যক্তিটিকে প্রথমে কিছুটা অবিশ্বাস করবে। পরে একদিন পুরোপুরিই অবিশ্বাস করবে।
মনোজগতের এ বিষয়কে যদি আমরা বাস্তব বিষয়ের সাথে মিলিয়ে বিশ্বাস করার চেষ্টা করি,তবে আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা অনেক বেশি মজবুত হবে।আমরা আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছি।অনেক দুরারোগ্য রোগেরও অনেক সহজ চিকিৎসা আজ আমরা অনেক সহজেই পাচ্ছি। এখন ধরুন,আপনার বাসায় একটি মলম আছে যা শরীর পুড়ে যাওয়ার পর পোড়া জায়গার ব্যাথা কমানো এবং ক্ষতস্থান পুনর্বস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।এখন যদি আমি আপনাকে বলি,ও ভাই! আপনার কাছে তো পোড়ার যন্ত্রণা কমানোর এবং ক্ষত নিরাময় করার জন্য শক্তিশালী মলম আছেই। তাহলে আপনি আপনার শরীর বারবার আগুনে পুড়ান আর পোড়ার যন্ত্রণার মলম লাগিয়ে কমাতে থাকুন। এটা বলার সাথে সাথেই আমাকে সবাই পাগল বলতে শুরু করবে। কিন্তু আমি কি মিথ্যা বলছি?আমি তো একশত ভাগ সত্য কথাই বলছি। তাহলে আমাকে কেন পাগল বলা হচ্ছে? বস্তুত বিষয়টা হলো, পোড়ার যন্ত্রণা কমানোর মলমটি আমাদের বাসায় সযত্নে রেখে দিতে হবে। কোনদিন যদি দুর্ঘটনাবশত কারো শরীর পুড়ে যায়। তবে ঠিক তখনই এই মলমটি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু নিজে ইচ্ছা করে শরীর পুড়িয়ে কেউ মলম লাগায় না। এবং এটা করাও যাবে না।
এখন আসি মনোজগতের দিকে। আমরা মানুষ,ভুল প্রায় নিত্যদিনই করি। অদৃশ্য এক শত্রু ইবলিশ, সর্বদা আমাদের সাথে লেগে আছে ভুল করানোর জন্যই। ইবলিশের সবচেয়ে দক্ষ কাজটা হলো,প্রথমে একটা ভুল করায়,পরে সেই ভুলটার উপর মানুষকে অভ্যস্ত করায় সুনিপুণভাবে। কিন্তু আমাদের আশার বাণী হলো,মহান সৃষ্টিকর্তা খুব ভালো ভাবেই জানতেন যে,আমরা মানুষ ভুল করবই এবং অন্তরকে ক্ষতও করব। তাই তিনি অন্তরের ক্ষতকে(ভুলটাকে)দূরীভূত করার জন্য একটি মলম বা একটি মাধ্যমের ব্যবস্থা রাখলেন। আর সেটি হলো তওবা। মানুষ একটি ভুল করবে আর সেই ভুলটাকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন এই প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা সৃষ্টিকর্তা নিজে দিয়েছেন(শিরক ব্যতীত)। এখন কোনো ব্যক্তি যদি দাবি করেন,মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আল্লাহ তালা নিজে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে,বান্দা ভুল করলে আমি নিজে ক্ষমা করে দিব। যদি সে তওবা করে(শিরক ব্যতীত)। তাহলে আমি ভুল করলে তওবা পড়ে নিবো, সমস্যা নাই তো!আমি পরিবারের নেতা, সমাজের নেতা, রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে একই ভুল বারবার করছি এই ভেবে কি যে,আমি তো তওবা পড়ে নিবো(জীবদ্দশাতেই)!!
এটা ভেবেই কি কোনো ব্যক্তি শিক্ষায়,চিকিৎসায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা করেই যাচ্ছেন। তাহলে আমি বলবো আপনার বিবেক সত্য উপলব্ধি থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।আপনার কাছে এতবড় শক্তিশালী মলম থাকার পরও একটু সময়ের জন্যও আপনার একটি আঙুলও সামন্য একটু পুড়াতে মন চায় না। আর সেই আপনিই কিনা একই ভুল বারবার করে তওবা নামক মলম (মাধ্যম) ব্যবহার করে আত্মশুদ্ধির আশায় বিভোর।
আরে ভাই এবং আমার বোন!
তওবা ত তখন করবেন যখন হঠাৎ আপনি কোনো ভুল করে ফেলবেন। আর দুই হাত তুলে হাঁটু গেড়ে বসে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে চোখেরজল ফেলে বলবেন। আর বলবেন,মাবুদ! আমি দুঃখি! আমি ভুল করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন।