মোঃ লুৎফর রহমান,মুক্তাগাছা,ময়মনসিংহঃ জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অতিপ্রাচীন শহর মুক্তাগাছা। সেই শহরের জমিদার বাড়ী সংলগ্ন রাজবাড়ী ভবনের একাংশেই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ‘মন্ডার’ দোকানের অভিমুখে ময়মনসিংহ -টাঙ্গাইল মহাসড়কের ৫০০ মিটার উত্তরে দাঁড়িয়ে আছে স্মনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ।
১ জুলাই ১৯৬৭ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৫৪ বছর যাবৎ এর যাত্রা। শুরুতে কলেজটির নাম মুক্তাগাছা কলেজ থাকলেও ১৯৭২ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সকল শইীদদের স্মরণে পরবর্তীতে কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ স্মৃতি কলেজ’।এ নাম ধারনের একটি বিশেষ কারণও আছে। কেননা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাগাছার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তারপর ১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংসদ, একাধিকবারের মন্ত্রী, স্পীকার প্রয়াত শামসুল হুদা চৌধুরীর ছিল বিশেষ অবদান। মূলত তার হাত ধরেই কলেজটি সরকারি হয়। পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য, কলেজের বেসরকারী আমলের বিশেষ কোন তথ্য, শিক্ষার্থীর নাম, এমনকি শিক্ষকদের তালিকাও কলেজে নেই।তথাপি কলেজেরই একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী যিনি কলেজ সরকারি করণের সময়ে ছাত্রদল সভাপতি মুক্তাগাছা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সংগঠক ও প্রবীণ রাজনৈতিক সুলতান আহমেদ এর সাথে কথা বলে কিছু তথ্য জানা যায়।
তিনি বলেন, কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রিন্সিপাল ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম, ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন সাঈদুর রহমান। শিক্ষকদের মাঝে ছিলেন প্রণব কুমার, মোজাম্মেল হক প্রমুখ। প্রতিষ্ঠাকালীন কলেজ কমিটির সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব প্রাক্তন সংসদ সদস্য কেরামত আলী তালুকদার। যাহোক, বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষনীয় কোর্স চালু আছে তিনটি শাখায় (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা,),স্নাতক পর্যায়ে আছে বি.এ (পাস), বি.এস.এস পাস, বি.বি.এস (পাস) ২০১১ সাল থেকে চালু হয়েছে অনার্স কোর্স। বর্তমানে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজী, সমাজকর্ম, অর্থনীতি, অ্যাকাউন্টিং ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্মান কোর্সে শিক্ষার্থীরা সুনামের সাথে লেখাপড়া করছে। প্রায় ১০হাজার শিক্ষার্থী এই কোলাজেন লেখাপড়া করছে। অনার্স চালু হওয়ার পর থেকে ময়মনসিংহ জেলার বাহির থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসলেও কলেজের বর্তমানে কোন আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজনীতি, আন্দোলন সহ বিভিন্নমুখী কর্মতৎপরতায় রয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনন্য অবদান।
প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান থাকলেও কলেজটির স্থান সংকুলান না হওয়ায় এর একাংশ কাজলকোঠা বিল সংলগ্ন কলেজের নিজস্ব ভূমিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমান অধ্যক্ষ এ কলেজেরই একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোঃ ইদ্রিস আলী। শিক্ষকমন্ডলী ৪০ জন ও ২৩ জন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান কলেজটি। দেশ মাতৃকার তরে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদের স্মৃতি বিজরিত এ কলেজটির সুনাম ও সুখ্যাতি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। কেননা, বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের অনেক কৃতি শিক্ষার্থী দেশের ভিতরে ও বাহিরে তাদের স্ব স্ব কর্ম -পেশার মাধ্যমে কলেজের মান ও সুনাম বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া প্রতি বছর বুয়েট, মেডেকেল, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কলেজেরই শিক্ষার্থীদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে।
আজ ১০ ডিসেম্বর মুক্তগাছা তথা ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তথা মুক্তাগাছার আপামর জনসাধারণ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে পথ চলুক সে কামনা করি। পাশাপাশি আশার কথা হলো দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে,এম খালিদ এম.পি উক্ত কলেজের জন্য একটি নান্দনিক একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন কলেজটির উন্নতিকল্পে।