লেখক,জহিরুল ইসলামঃ অশুভ মন্ত্র আর সকল চক্রান্তকে উপেক্ষা করে,দাসত্বের শিকলকে ছিন্ন-ভিন্ন করে যেই জাতি সাদরে গ্রহণ করতে পারে মরণবীন,সেই জাতিই বৈষ্যমের অমসৃণ পথ আর কুশাসনের মসনদকে পদদলিত করে পৃথিবীর বুকে উড়িয়ে দেন বিজয় নিশান।বীর সেই জাতির জ্ঞানাধার বিবেকের জ্যোতি সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।আর পরাজয়ের লজ্জানুতাপে দুঃসাহসিক সেই রাষ্ট্রনায়কও মস্তক নত করে বীরের বিজয় মেনে নিতে বাধ্য হন।
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয় দিবস।দীর্ঘ নয় মাসের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে শত-সহস্র তরুণ-তরুণীর, যুবক-যুবতীর ও লাখো আপামর জনতার অবর্ণনীয় আত্মত্যাগের বিনিময়ে বীর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন বাঙালি জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল যৌথ আক্রমণের কারণে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাক বাহিনীরা পিছু হটতে বাধ্য হন।যৌথবাহিনীদের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনতারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।ফলশ্রুতিতে যৌথবাহিনীরা পাক হানাদারদের হটিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে পাক বাহিনী পর্যুদস্ত ও হতোদ্যম হয়ে পড়েন।
অবশেষে,১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী এই মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে, বাংলাদেশ সময় ৪:৩১মিনিটে ঢাকার রমনা রেস কোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ভারতীয় ও বাংলাদেশী বাহিনীর যুগ্ম কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
এর সাথে সাথেই বাঙালি জাতির এক বিশ্রী-বীভৎস কালো অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।ইতিহাসের পাতায় রচিত হয় বাঙালিদের এক মর্মস্পর্শী ইতিহাস।বীর বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষীণ বেলাটুকুও হঠাৎ নিভিয়ে দিয়ে, স্বপ্নপুরীর সকল খেলাই সাঙ্গ করে বাংলার বুকে উত্তোলন করেন স্বাধীন দেশের লাল সবুজের পতাকা।