বিজয়ের হাসি ( পর্ব-৫)আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

৪০

লেখক : জহিরুল ইসলামঃ যেই অন্তরে প্রেমের আগুন জ্বলতে থাকে,সেই অন্তর থেকে আরেক অন্তরে সেই প্রেমের আগুনই জ্বলে উঠে।কিন্তু অন্তরে যদি জ্বলে উঠে ধ্বংসের আগুন, তবে সেই ধ্বংসের আগুনের লেলিহান শিখা ঢিলেঢালা কোনো সম্পর্ক নয় বরং গভীর সম্বন্ধ ও অটুট বন্ধনকেও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।তেমনি এক হত্যার নেশার আগুনে মত্ত হয়ে,দেশীয় দোসর আর পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যায় মেতে উঠেছিল।

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।কার্যত ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পূর্ব পাকিস্তানের বিকৃত মানসিকতার কিছু দোসরদের(রাজাকার,আল বদর,আল শামস) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বাঙালী জাতিকে চিরতরে মেধাশূন্য করার জন্য নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণীয়-বরণীয় ও নৃশংস হত্যার এই ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরকে”শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস”হিসেবে ঘোষণা করেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবী কারা বা তাদের কাজই বা কী?প্রচলিত ধারায় আমরা বলতে পারি,লেখক, গবেষক, বিজ্ঞানী,সাংবাদিক, রাজনীতিক,আইনজীবী, প্রকৌশলী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্য ব্যক্তিত্বসহ যারা দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে মানসিক শ্রম বা বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম দিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে,কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সাধন করে,দেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরেন তারাই হলেন বুদ্ধিজীবী।তারাই জাতির অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক। তারাই কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে কিংবা শিক্ষালয়ে পাঠদানের মাধ্যমে জাতির পরবর্তী সূর্য সন্তান তৈরির কারিগরের দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা ও তাদের দোসরা বাঙালীদের মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে ৪ ডিসেম্বরের ঢাকার কারফিউকে কাজে লাগিয়ে, ১০শে ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চিহ্নিত অধ্যাপক,সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী,লেখকসহ তৎকালিন প্রায় ২০০ বুদ্ধিজীবীদেরকে জোরপূর্বক অপহরণ করে,চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর,নাখালপাড়া ও রাজারবাগসহ বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

আজো নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড বাঙালীদের বেদনাক্লিষ্ট হ্নদয়কে ভাবিয়ে তুলে।যে লাশ সেইদিন পায়নি কাফনবস্ত্রের একটি সুতাও, আজ সেই লাশের মাটিই বাঙালীদের কাঁদায়,চোখ ভিজে উঠে অশ্রুজলে যেদিন থেকে মনে বাসা বেধেছে”শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস”।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.