লেখক,জহিরুল ইসলামঃ ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১,সূর্যের উদয়ে ভোর রাতের ঘন কালো অন্ধকার যেমন দূরীভূত হতে থাকে,তেমনি অকৃত্রিম বন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়নও পশ্চিম পাকিস্তানের আহাম্মকপূর্ণ ধোঁকার আঁধারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে,বাংলার জমিনে স্বাধীনতার সূর্য উদয়ে রেখেছিল অপরিসীম অবদান।
১৯৭১ সালের এইদিনে,ধ্বংসের উন্মাদনায় মেতে উঠা পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষায় মরিয়া মার্কিন-চীনের যৌথ কূটনৈতিক চেষ্টাকে ব্যর্থ করে,বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের জন্য
সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদান অনস্বীকার্য।
এইদিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয়বারের মত ভেটো দেন।জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো না দিলে,হয়ত বাংলার স্বাধীনতার সূর্য চিরদিনের জন্য অস্তমিত হয়ে যেত।
১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১,সমগ্র বাংলা প্রায় শত্রু মুক্ত, উত্তোলিত হয়েগেছে লাল সবুজের পতাকা।কিন্তু ঢাকাতে তখনো নির্লজ্জ হানাদারদের আস্তানায় বাজছে যেন ক্ষীণ জয় ধ্বনির হুংকার। তাদের হুংকারকে ধূলিস্যাত করার জন্য ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দিনে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়।৫৭ নম্বর ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে যায় পূর্বদিক থেকে আর উত্তরদিক থেকে জেনারেল গন্ধর্ব নাগারার ব্রিগেড এগিয়ে যান।ঐদিন রাত নয়টায় মেজর জেনারেল নাগারা টাঙ্গাইলে আসেন।রাত সাড়ে নয়টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেষ্ট হাউজে পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে তারা আলোচনায় বসেন।
সুপরিকল্পিত এই যুদ্ধ পরিকল্পনা পশ্চিম পাকিস্তানের জয়ের ক্ষীণ আশার সূর্যকে চিরতরের জন্য অবসান ঘটায়।
১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের ঢাকার এই যুদ্ধ পরিকল্পনা বাঙালী মুক্তিসেনাদের মনে সাহস ও উৎসাহের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।শত দুংখ,কষ্ট, লাঞ্চনা-বঞ্চনা আর লাখো মানুষের চাপা আর্তনাদের মাঝেই মুক্তিবাহিনীরা নীলফামারী, মানিকগঞ্জ ও বগুড়া জেলা থেকে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত করে,উত্তোলন করেন,স্বাধীন দেশের লাল সবুজের পতাকা।