লেখক : জহিরুল ইসলামঃ আমি শকুন নই যে,শকুনপনার কুরুচি মেটানোর জন্য পাপের পচা লাশ খুজে বেড়াবো, আর দুনিয়ার সেই নোংরা ধ্বংসশীল-পচনশীল নাপাক বস্তু ভক্ষণ করব। আমি নই মনপূজারী নাবালক। আমার পেটের ক্ষুধার জ্বালার মহাপ্রেমের প্রচণ্ড আঘাতে খসে পড়া এক একটি অশ্রু ফোটা পাহাড়কে পিষিয়ে বালু বানিয়ে দিতে পারে। আমার অন্তঃকরণে কষ্টের পীড়ার আঘাতে খসে পড়া এক একটি অশ্রু ফোটা বিশাল সাগরকেও তরঙ্গে কাঁপিয়ে তুলতে পারে। অজস্র দিনরাত ক্ষুধার জ্বালায় অতিবাহিত করা আমি,নই স্বাধীনতার বেখেয়াল কোন নাবালক শিশু। রাস্তার ধারে যাত্রী ছাউনি কিংবা গাছ তলায় আমার বসবাস। প্রভাতে আমার খাবার মেলে নোংরা নর্দমা কিংবা ডাস্টবিনের পাশে। কিন্তু আমরা সেই শিশু! ভূখণ্ড স্বাধীন করার সময় আমরা প্রায় ৪(চার) লাখ শিশু-কিশোর রাতের আঁধারে গুপ্তচর হয়ে পৌঁছে দিয়েছি খবর।
সেইদিন স্বাধীনতা অর্জনে প্রয়োজনীয় খবর আমরা মুক্তিবাহিনীর কাছে পোঁছে দিয়েছি বলে,আমাদের ডাকা হতো”ওয়াকিটকি”।
তবে আজ কেন!অত্যাধুনিক ওয়াকিটকি কিংবা ডিজিটাল ডিভাইসেও ধরা পড়ে না, আমার রাস্তার কণ্টকাকীর্ণ আবাস কিংবা ডাস্টবিনের দুর্গন্ধময় খাবারের চিত্র।
রাস্তার কুকুর আমাকে যেই স্বাধীনতা শিখিয়েছে,আমার ভূখণ্ড স্বাধীন হওয়ার পরও কিছু মনের খায়েশ পূজারী ক্ষমতালোভী মানুষরূপী পশু শিখাতে পারেনি সেই স্বাধীনতা।অভুক্ত পেটের ক্ষুধার জ্বালায় আর রাস্তার কুকুরের চিৎকারের সাথে আমি আজ বলতে চাই,স্বাধীনতার অর্ধশত বৎসর পরও যদি আমি না পাই ক্ষুধা মেটানোর স্বাধীনতা,নিরাপদ আশ্রয়ের স্বাধীনতা এবং শিক্ষা অর্জনের স্বাধীনতা,তবে লালিত মনের কুরুচির স্বাধীনতার কপালে আমি লাথি মারি।
আমি রাস্তার কুকুরের সাথে বসবাস করেও,আমি বলছি আমার আত্মা সুরুচিপূর্ণ, আমি নই শকুন।আমি শিশু তবুও জাগতিক আকাঙ্ক্ষায় আমি নই দাসত্বের শিকলে বন্দি।বিজয়ের মাসে আকাশপানে চেয়ে শির উচ্চ করে বলছি,যারা মনের দাসত্বের শিকলে আবদ্ধ তারা কখনই স্বাধীন নয় বরং তারা স্বাধীন ভূখণ্ডে নির্জীব পরাধীন।