জোবায়ের হোসেন জয়, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, এখন তা বাস্তব গতকাল সপ্নের পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে স্প্যান বসানের কাজ বাকি থাকলো আর একটি। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে উঠছে তার মাথা উচু করে। পদ্মার তীরে গেলে দেখা মেলে সুবিশাল দীর্ঘ পিলারের সারি। তার উপর একে একে বসানো হচ্ছে ইস্পাতের কাঠামো সবমিলিয়ে প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার অচিরেই দৃশ্যমান হয়ে যাবে । সর্ব মোট এই সেতুর দৈঘ্য ৬দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে এবং অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশকে আরো স্বনির্ভর করে তুলবে।
তবে নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি সেতু নির্মাণ করতে যাওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। সর্ব প্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সে সময়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য পদ্মায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ এই সময়ে পূর্ব সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাবত্য যাচাই হয়। ২০০৪ সালে জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়। এর বিভিন্ন মানুষের ব্যার্থ চেষ্টায় তারা বিনিয়োগকারীদের অনুৎসাহিত করে ও দূর্নীতির করা হচ্ছে বলে কিছু দেশ বিরোধী চক্র চক্রান্ত শুরু করে।
এরপর বেশ কিছুদিন সিদ্ধান্তহীনতা চলতে থাকে এবং বিদেশী বিনিয়োগ করিরা তারা চলে যায় । এর পর দেশ এবং বিদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমেও সেতুটি করার প্রস্তাব আসে।
একসময় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার কথা বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানানোর আশা প্রকাশ করেন।
এতেই কেটে যায় কালো মেঘ, দিগন্ত আলোকিত করে হেসে উঠে সূর্য । এর ফলে সকল জল্পনাকল্পনাকে পাশ কাটিয়ে কাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন । এর ধারা বাহিকতাই সেতুর কাজ বিভিন্ন অন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে চায়না প্রতিষ্ঠান গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আর এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রথম কোনো সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিতে উন্নত। এই সেতু হয়ে গেলে তাদের কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকায় চলে আসবে। মংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরে চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পুরো দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কোনো বিনিয়োগের ১২ শতাংশ রেট অব রিটার্ন হলে সেটি আদর্শ বিবেচনা করা হয়। এই সেতু হলে বছরে বিনিয়োগের ১৯ শতাংশ করে উঠে আসবে। কৃষি-শিল্প-অর্থনীতি-শিক্ষা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সহ সব ক্ষেত্রেই এই সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে।আশা করি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে সপ্নের সেতু দিয়ে জনসাধারণের পরিবহণ ও যাতায়াতের জন্য চালু করে দিবেন।
২০৩৫ – ৪০ সালে বাংলাদেশ যে উন্নত দেশ হবে, সে ক্ষেত্রেও এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বপ্নের এই সেতুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।