বন বিভাগের মামলায় আটকে আছে উন্নয়ন

৬৩

তনয় বিশ্বাস,টাঙ্গাইলঃ বন বিভাগ ও এলজিইডি’র টানাপোড়নে উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি, বন অধ্যুষিত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। প্রায় পাঁচ বছর আগে শোলাকুঁড়ি থেকে টেলকি পর্যন্ত দশ কিলোমিটার সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ পাঁকাকরণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। এক কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করতে পারলেও সড়কটি নিজেদের দাবি করে আপত্তি তুলে মামলা করেন বন বিভাগ। আর এতেই আটকে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ। সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গহীণ অরণ্যের ভেতরে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালির বেঁচে থাকার সম্মিলিত প্রয়াস। যুগ যুগ ধরে বন আর পাহাড়কে ঘিরেই তাদের জীবন ও জীবিকা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুরসহ ঘাটাইল, সখীপুর ও মির্জাপুরে অংশ বিশেষ নিয়ে মধুপুর গড়াঞ্চল অবস্থিত। এই গড়াঞ্চলকে বলা হয় রাজধানী ঢাকার ফুঁসফুঁস। অথচ অবহেলিত এই গড়াঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। মধুপুর উপজেলার শোলাকুঁড়ি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হচ্ছে শোলাকুঁড়ি-টেলকি সড়ক। এই সড়ক ব্যবহার করেই গড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষ সহজেই ময়মনসিংহ ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মধুপুর হয়ে টাঙ্গাইল ও ঢাকায় যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও সড়কটি পাঁকাকরণ না হওয়ায় অবহেলিত এই জনপদের মানুষের ভোগান্তির যেন শেষই হচ্ছে না।

অপরদিকে গড়াঞ্চলে চাষকৃত কলা, আনারস, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল ও শাক-সবজি পরিবহণ করা চরম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ মাত্র দশ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার খেটে খাওয়া এসব মানুষ।

মধুপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস জানান, পাহাড়ি এই জনপদের অবহেলিত মানুষের উন্নয়নের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে শোলাকুঁড়ি-টেলকি সড়কটি পাঁকাকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। দশ কিলোমিটার সড়কটির মধ্যে শোলাকুঁড়ি থেকে বেদুরিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক পাঁকাকরণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। প্রায় ৫২ লাখ এক হাজার টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স উচ্ছ্বল কনস্ট্রাকশন। কিন্তু কাজ শুরুর পর বন বিভাগ সড়কটি তাদের দাবি করে মামলা দায়ের করে। এতে এক কিলোমিটার অংশ পাঁকাকরণ হলেও সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। এরই মধ্যে পাঁকা করা অংশটুকুও ভেঙে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

কাকড়াগুনি এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কটির বেহাল দশার কারনে আমার কারখানায় কাঁচামাল আনতে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাঠাতে খুবই ঝামেলা পোহাতে হয়। বর্ষা মওসুমে এই কষ্ট আরও কয়েক গুন বেড়ে যায়। পরিবহন খরচ পড়ে অনেক বেশি। সড়কটি দ্রুত সংস্কার এবং সড়কের অবশিষ্টাংশ পাঁকাকরণের দাবি জানান তিনি।

বেদুরিয়া এলাকার ত্রিপল এবং গিলাগাইশা এলাকার আবু হানিফ বলেন, সড়কটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ আমাদের এই সমস্যা দেখার যেন কেউ নেই।

হরিণধরা এলাকার গেদা এবং অরণখোলা এলাকার হেলাল বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঘোঁড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করে থাকি। কিন্তু রাস্তাটি ভাঙাচোঁরা থাকার কারণে প্রায়ই গাড়ি উল্টে ভেঙে যায়। এতে অনেক সময় আমাদের জান-মাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও বাকি অংশ পাঁকাকরণ করা অতীব প্রয়োজন। কিন্তু মামলা থাকায় সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। বন বিভাগ মামলাটি তুলে নিয়ে অনাপত্তিপত্র দিলে সড়কটি দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব।

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, যেহেতু সড়কটি বন বিভাগের অধীনে। তাই এই সড়কের বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের। সড়কটি নিয়ে বর্তমানে একটি মামলা চলমান থাকায় কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে জনস্বার্থে সড়কটি উন্নয়নের জন্য অবমুক্ত হতে পারে।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.