জোবায়ের হোসেন জয়,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ Rayek Fayrose একজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য,তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে জুনিয়ার অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। কয়েক বছর থেকে তিনি বিভিন্ন দেশ বিদেশে বিভিন্ন জাহাজে ডিউটি করে আসছেন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ৫ নং ছয়ানী ইউনিয়নের। তিনি সম্পর্কে আমার ছোট ভাই হয়। কিছু দিন আগে তিনি অষ্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম থেকে। কিন্তু সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় তাদের জাহাজের কাছ দিয়ে অনেক বক পাখি উড়ছিল। হঠাৎ একটি বক পাখি উড়তে উড়তে গভীর সাগরে চলে আসে। ধীরে ধীরে সকল বক পাখি চলে গেলেও এই বক পাখি রয়ে যায়। সমুদ্রের কোন কূল না পেয়ে বক পাখিটির জাহাজের ডেকে ঠাঁই হয় । ওনাদের জাহাজের পোর্ট-অফ কল ছিলো অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট এলিজাবেথ। যেটা ছিলো ২২ দিনের সমুদ্র পথ। বক পাখি টা খাবার না পেয়ে ধীরে ধীরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। জাহাজের প্রধান সেনাপতি ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল করিম স্যারের কড়া অর্ডার ছিলো, পাখি টা কে কেউ ছুঁতে যেন না পারে। কারণ বক পাখি থেকে ফ্লু রোগ ছড়ায়। বক পাখিটিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বলেন,কিন্তু ততোক্ষনে বক পাখিটার সকল শক্তি হারিয়ে ফেলে কারণ সেই দীর্ঘ সময় উড়েছিল এবং না খেয়ে আছে।
ওনি মনে করেছিলেন,পাখিটা জাহাজে মারা যাওয়া মানে অমঙ্গল নিয়ে আনবে। অন্যদিকে বক পাখি ফ্লু রোগ ছড়ায় সেটার ও ভয় কাজ করে। কোন রকম একজনের আক্রান্ত হলে জাহাজের সবার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। খারাপ লাগা শুরু হশ ওনার,যখন দেখে পাখি টা আর উড়তে পারছে না,কারণ পাখিটা উড়তে উড়তে হয়রান হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় সেই খাবার খেতে পারছিলো না। সন্ধ্যার পর জাহাজের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওনি পাখি টা কে খাবার খাইয়েছেন এবং তখন বক পাখি তার উড়ে যাবার শক্তি ও হারিয়ে ফেলেছিল। আর এই কাজে ওনাকে সাহায্য করতো ওনার এক ব্যাচমেট।
যখন জাহাজের সবাই বুঝতে পেরেছিল পাখিটা মারা যাচ্ছে না, আবার উড়তেও পারছেনা। তখন আবার সবার ভিতরে একটা ভয় কাজ করতে থাকে,না খেয়ে পাখি কি এতো দিন বেঁচে থাকে?
কিন্তু পাখি টাকে তো রোজ রোজ খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এভাবেই ২২ দিনের সমুদ্র পথ পাড়ি দেওয়া অতিবাহিত হতে থাকে। যখন দীর্ঘ দিন পর ওনাদের গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ার এলিজাবেথ পোর্টে পৌঁছান,তখন ওনারা অস্ট্রেলিয়া এলিজাবেথ পোর্টে এক সার্ভেয়ার কে বলে পাখি টা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
ঐ সাদা চামড়ার মানুষ গুলা এত বজ্জাৎ ছিলো,তিনি জানতেন না। সেই সার্ভেয়ার তিনি একটি বই নিয়ে আসে জাহাজে, বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখাচ্ছিলো এটা তাদের দেশের বক পাখি না। তাদের দেশের বক পাখি এরকম না। অনেক বুঝানোর ট্রাই করেছিলেন তিনি ও তাদের সহপাঠীগণ, এই সার্ভেয়ার মানুষটা কোন মতেই অবলা পাখি টা কে নিতে চাইলোনা। তখন কি আর করার,তারপর ও কেউ পাখি টার কাছে যাওয়া সহ্য করতোনা।
আর পাখিটার এমন স্বভাব হয়েছে যে তাকে না খাইয়ে দিলে সে খেতে পারত না। দীর্ঘ আড়াই মাস জাহাজের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে,তিনি পাখিটার দেখাশুনা করতেন। রোজ রোজ খাওয়াতেন এবং বন্ধুর মত ভালোবাসতে শুরু করেন। আর আশায় ছিলেন,যে কখন তিনি দেশে আসবেন এবং পাখি টাকে তার আপন নীড়ে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিবেন ।
দীর্ঘ আড়াই মাস পর যখন জাহাজ দেশে ডুকেছে,ঐ দিন আর তিনি ভয় করেনি। পাখি টা কে নিয়ে আসলেন সকলের সামনে। তারপর যখন সেন্টামর্টিনের কাছে চলে আসেন। তখন তিনি ব্রিজের দরজা খুলে দেন কিন্তু সে পাখিটা কোন ভাবেই বের হতে পারছেনা। কাঁচের সচ্ছ গ্লাস টা তার জন্য বড্ড কনফিউজিং এর মত লাগছে এবং হয়তো পাখিটা ভাবছে আকাশ,সাগর সব পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কি আশ্চর্য বের হতে পারছি না। বার বার গ্লাসের ধাক্কা খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে বকটি। তখন বক পাখিটির শরীরে শক্তি বেড়ে গেলো হয়তো।সে তার নিজের প্রিয় ভূমি ও নিজের আপন নীড়ে ফিরছে এবং ভ্রমণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন সে বাসায় ফেরার আনন্দ উপভোগ করতেছে।
তখন ওনার মনে আবার চিন্তা আসলো বকটি আবার মারা যায় কিনা,কাঁচের গ্লাসের সাথে ধাক্কা খাচ্ছিলো যে। প্রায় দীর্ঘ ৩০ মিনিট চেষ্টার পর দরজা দেখানোর মিশন সাকসেসফুল করলেন সেই ভাইটি ।
অবশেষে বক পাখিটি আকাশ পানে উড়াল দিল এবং তার দীর্ঘ ভ্রমণ শেষ করে মুক্ত আকাশে পাড়ি দিল। সে তার প্রিয় ভূমিতে মুক্ত আকাশে বিচরণ শুরু করলো এবং সকলে তাকে স্বাগতম জানালো।
সেই ভাইটি হয়তো মনে মনে বললো। ও বক পাখি, তুমি বেঁচে থাকো অনেক দিন এবং বাসায় গিয়ে তুমি তোমার পরিবারকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ এর সময়গুলোর কথা বলি। সামনে তোমার নাতি নাতনীদের কাছে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন গল্পটা করতে মনে রেখ। আমি ও তোমার মত এমন আরো বক পাখির অপেক্ষায় আছি সামনের সব ভ্রমণে। তোমরা এসো আবার আমার হাতের খাবার খেয়ে যেও এবং আমার আদর নিও।
ধন্যবাদ ভাই,তোমার নাম আমরা পাখি প্রেমী দিয়েছি।