ফিরে দেখা ২০২০- নদী-বিল-খাল,বাংলার ভেনিস বরিশাল(পার্ট-৫)

৪০

জাকারিয়া মাহমুদ প্রিন্স,বরিশাল জেলা প্রতিনিধিঃ ২০২০ বরনে ছিলো নানা আয়োজন। কমতি ছিলোনা কোন কিছুতেই এ যে অন্য রকম সংখ্যা দিয়ে তৈরি নতুন সাল, যে দিক দিয়েই দেখে সে দিকেই ২০ ২০। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ভিন্ন মাত্রার সাল ২০২০। তার পরেও বিষের বাশি হতে হয় ২০২০ সালকে।

দিনের শুরুটা ছিলো শিশুদের মাঝে নতুন বই বিতরণ দিয়ে, নতুন বই এর ঘ্রাণে শিক্ষার্থী অভিভাবক আত্মহারা। ৩ জানুয়ারি ২০২০ শীতের মধ্যে বৃষ্টি এসে জনজীবনে হানা দেয়,টানা কয়েকদিন বৃষ্টি দূর্ভোগে পরে সাধারন মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে যায়। বরিশালে মেইন সড়কপথ অলিগলিতে দেখা দেয় জলবদ্ধতা। আরো বিপাকে পরে যায় খেটে খাওয়া দিন মজুর, রিকশা, ঠেলাগাড়ি, অটো চালকরা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ছিলনা তেমন কোন ব্যবস্থা। এ নিয়ে সমালোচনায়ও পরতে হয় সিটি কর্পোরেশনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে।

রাস্তা- ঘাট ড্রেন সংস্কার করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে দেখা দেয় কোভিড-১৯। মার্চে মাসে শুরুতেই কোভিড-১৯ আতঙ্ক ছড়ালেও মাসের শেষের দিকে দেখা দেয় বাস্তবতায়,কাল হয়ে আসে মানুষের জীবন,করোনা মহামারী আকার ধারণ করার আগেই প্রশাসনিক ভাবে লক ডাউন করে দেওয়া হয় পুরো বরিশাল, ২২ মার্চ এই লক ডাউনের ঘোষণা আসে।

ঔষধ আর নির্দিষ্ট কিছু দোকান পাট নিয়ম মেনে খোলারেখে অন্য সকল অফিস আদালত দোকানপাট যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়, বিপর্যয় নেমে আসে সকল শ্রেণির মানুষের জীবনে, দিন যত যায় বাড়তে থাকে করোনার মহামারী ধারন, সাথে সাথে বাড়তে থাকে লক ডাউনের সময় সীমা। দীর্ঘ্য দিন বদ্ধ ঘরে থেকে অস্থিরতায় পরে যায় মানুষজন। আর্থিক সংকটে পরে যায় সকল আয়ের মানুষ। খুবই সমস্যায় পরে যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন,দিনের পরে দিন না খেয়েও পার করেছে বহু মানুষ,খাদ্যসংকটের আতঙ্কে আরো নিস্তব্ধ হয়ে পরে অতি কম আয়ের সাধারন মানুষ।

তারই মাঝে কাল হয়ে আঘাতের তাণ্ডব হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এ যেনো মরার উপর খারার ঘাঁ, গুরিয়ে যায় বহু ঘরবাড়ি গাছপালা। এই সুযোগটি পুঁজি করে দ্রব্যমূল্যর দাম বড়িয়ে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। বেড়ে যায় মাস্ক, গ্লাবস, চাল, ডাল, ঔষধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সমূহের,মাস্ক গ্লোবস কিছু ঔষধ হয়ে যায় এক পর্যায় সোনার হরিণ ।

এক পর্যায় অনেকে লক ডাউন অমান্য করে রোজগারে নেমে যায় অতি সাধারন লোকজন, করোনা থেকে বাঁচাতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয় -সেনা পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের। এই মহামারীর দূর সময়ে নানান শ্রেণির অসহায় মানুষের পাশে এসে দাড়ায় বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সরকারী সহায়তা, জনজীবনে নেমে আসে কিছু স্বস্থি।

বরিশালে প্রশাসনের ভূমিকা ছিলো চোখে পরার মতো, জীবন বাজি রেখে দিন রাত নিরলস ভাবে কাজ করে গেছে মানুষের সেবায়,সচেতনা সতর্ক মূলক ক্যাম্প, মাস্ক বিতরণ,খাবার বিতরণ এমন কি করোনা রোগীদের সেবা থেকে মৃত্যু ব্যক্তি কে দাফন কাজে নিয়োজিত ছিলো পুলিশ সেনা সহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন জায়গায় করোনায় এই বাহিনীর সদস্যদেরও মৃত্যু হয়েছে ,এদের প্রশংসা অতুলনীয়।করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বরিশালের হাজারো মানুষ,জীবন গিয়েছ শতাধিক মানুষের, এটি এখোন চলমান রয়েছে।বিভিন্ন অসুস্থতায় জীবন গেছে বারিশালের অনেক নামীদামি মানুষের তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন বরিশালের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর সহধর্মিণী বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর মাতা বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি,আবদুল্লা শাহান আরা বেগম , বরিশাল সিটি ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন,বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান, পটুয়াখালী ৩ বারবার নির্বাচিত সংসদ আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন,পটুয়াখালী স্বাধীনতা প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হায়দার বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল চিকিৎসক ডা:মো:এমদাদুল্লাহ খান সহ আরো অনেকে।২০২০এই করোনা কালিন সময়ে দীর্ঘ্য দিন সব কিছু বন্ধ থাকার কারনে তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া দেখেনি বরিশালবাসী,কিন্তু নেওয়া হয়েছে উন্নয়নের নানা উদ্যোগ। বরিশাল সিটিতে রাস্তা পরিষ্কার রাখার জন্য আনা হয়েছে উন্নত মানের ঝাড়ু দেয়ার গাড়ি,দেশের প্রথম থ্রিডি জেব্রা ক্রোসিং, বরিশাল সদর ঘাট নদী বন্দরে গভীর ড্রেসিং নিষ্কাশন,পর্যটক কেন্দ্র দূর্ঘাসাগরে আনা হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া,কিন্তু বারবার সমালোচনায় পরতে হয়েছে বরিশালের যাত্রী বহনকারী খ্যাতি নামা লঞ্চ কর্তৃপক্ষদের ২০২০ সালে দুটি হত্যাকান্ড ঘটে এই পরিবহন গুলোতে।

আলোচনায় এসেছে ক্রিকেট অংগন, বহুদিন পরে ফরচুন সু কোম্পানির মাধ্যোমে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট কাপে ফরচুন বরিশাল নামে,খুশি যেনো দীর্ঘ্য স্থায়ী হচ্ছেই না উন্নত সিটি কর্পোরেশনের পয়েন্ট টেবিলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নাম সবার তলানিতে।

সব চেয়ে আলোচনায় আসে, বরগুনা প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরিফ হত্যাকান্ডের রায়,যিনি ছিলো প্রধান স্বাক্ষী মিন্নি তিনি হলেন স্বাক্ষী থেকে ফাঁসির আসামী। যা সারা পৃথিবী জুড়ে নজর কারে, দশ আসামীর ছয় জনকে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ৪ জনকে খালাশ দেওয়া হয়,১৪ জনকে বয়স বিবেচনায় যশোর শিশু সংশোধনকারাগারে রাখা হয়েছে।

২০২০ সালে বরিশালে অসংখ্য সংবাদ কর্মী নিয়ে পথ চলা শুরু করেছে দৈনিক সাহসী কন্ঠ, তারই সাথে সাথে সম্পূর্ণ দৃশ্য মান হলো বরিশালবাসী সহ সারা বাংলার স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর সাথে বরিশালে তৈরি হতে শুরু করেছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা, তৈরি হবে বেকার যুবকের কর্মসংস্থান।
২০২০ সালে পটুয়াখালী ছিলো উন্নয়নের রোল মডেল পায়রা বন্দর থেকে শুরু করে, পায়রা তাপ বিদুৎ কেন্দ্র, পায়রা নদীর উপর পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ বেতাগী উপজেলার স্বপ্নের এক মাত্র যোগাযোগ পথ পায়রা ব্রীজ, ঢাকা বরিশাল কুয়াকাটা রেলপথ যোগাযোগ এর কাজ চলোমান অবস্থায় আছে। এই উন্নয়নের ছোঁয়ায় বরিশাল হবে আগামি বাংলাদেশের রোল মডেল।

এ দিকে পদ্মা সেতুর সাথে সাথে, বাংলাদেশ সহ এশিয়ার অন্যতম আরো একটি সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে এতে দ্বিপরাজ ভোলার সাথে আর থাকবেনা বরিশালের দূরত্বের সম্পর্ক। সর্বশেষ ২০২০ সালে ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ই ভি এম ভোটে বরিশাল জেলার বিভিন্ন পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ২০২০ সাল।

চলমান থাকবে……..

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.