সঞ্জয় বৈরাগী, পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুর জেলা হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ১২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করার কথা থাকলেও বর্তমানে নির্মাণ করা হচ্ছে ৭ তলা বিশিষ্ট ভবন। ভবন নির্মাণের নকশায় রয়েছে ১২ তলার এবং ভিত্তিও (ফাউন্ডেশন) ১২ তলা বিশিষ্ট ভবনের। কিন্তু গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে ৭ তলা ভবন নির্মানে এবং সে অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের ৬০ শয্যার ব্যবস্থা বাকি রেখেই নির্মিত হচ্ছে ভবনটি।
বর্তমানে ৩৫.৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বেসমেন্টসহ ৭ তলা ভবনের নির্মাণ চললেও মূল ভবন ১২ তলার বাকি ৫ তলা নির্মাণের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ী ২৪টি আধুনিক কেবিন, করোনা ওয়ার্ড, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, কিডনী ডায়ালসিস ইউনিট, ডায়াবেটিকস ইউনিটসহ বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াই ১৯০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নিয়ে পিরোজপুরবাসীকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। অপূরণ থেকে যাচ্ছে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের স্বপ্ন।
২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায় এক সফরে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার। তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আহবানে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল ২৫০ শয্যার ১২ তলা ও ভান্ডারিয়া উপজেলা হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণে ঘোষণা দেয়া হয়।
২০১৮ সালের শেষের দিকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে গণপূর্ত বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেলা হাসপাতাল নির্মাণে ৭ তলার অনুমোদন পায়। যেখানে রয়েছে বেসমেন্টসহ ঊর্ধ্বমূখী ৭ তলা, যার বর্তমানে মাত্র ৪ তলার নির্মাণ কাজ চলমান। তিন তলার কাজ বাকি, যা কার্যাদেশে উল্লেখিত মেয়াদে এ বছরের এপ্রিলে সম্পন্ন হওয়ার শর্ত ছিল। বাকি কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলা মুস্কিল। এই ৭ তলার মধ্যে ইমার্জেন্সি ব্লক, ডক্টরস ব্লক, অপারেশন থিয়েটারসহ জেনারেল বেড থাকলেও স্থায়ী কেবিন থাকছে না।
পিরোজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাদুল্লাহ লিটন বলেন, সুযোগ বার বার আসেনা, দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হাসপাতালের এ উন্নয়ন। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল একটানা ১২ তলা নির্মিত না হলে পূর্নাঙ্গ ভবন নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ঘোষণা অনুযায়ী ১২ তলা হাসপাতালের নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের স্মৃতি এবং সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাতে জেলা হাসপাতাল পূর্নাঙ্গ হতে হবে। তা না হলে চিকিৎসা সেবা কাঙ্খিত পর্যায়ে হবে না।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. নিজাম উদ্দিন জানান, ৭ তলার ভবনে আইসিইউ, সিসিইউ ডায়ালাইসিস, গাইনি, মেডিসিন, মহিলা, অর্থপেডিকস্, চক্ষু, সার্জারি, ইএনটি, কার্ডিওলজি ইত্যাদি বিভাগের সুযোগ থাকবে অপর্যাপ্ত। থাকবে না স্থায়ী কোন কেবিন সুবিধা। এছাড়া কিডনী ইউনিট, ডায়াবেটিকস ইউনিটও থাকছে না এই ৭ তলা ভবনে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য ১২ তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও বর্তমানে ৭ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেবিন সুবিধাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা থাকবে না। কেননা বিভিন্ন তলার ডিজাইন একেক রকম করা। তবে আপাতত যে তলা নির্মিত হচ্ছে তাতে সম্ভব মতো কিছু কেবিনসহ অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। তবে পুরো ১২ তলা নির্মান এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-বিভাগীয় প্রকেীশলী মো. সুলতান মাহমুদ সৈকত জানান, পিরোজপুরে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য ১২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে প্রক্কলন তৈরী করা হয়েছিল। সেভাবে বেজমেন্টসহ ১২ তলা ভবনের নকশাও (ডিজাইন) তৈরী করা হয়। সে অনুযায়ী ১২ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) করা হয়েছে। তবে বর্তমানে ৭ তলা ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসা সেবার অপরিহার্য বিভাগগুলোর সুযোগ রেখেই ৭ তলা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলমান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৭ তলার কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকী ৫ তলা নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। ২৪টি স্থায়ী কেবিন, করোনা ওয়ার্ডে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, কিডনি ডায়ালেসিসসহ বিভিন্ন সুবিধাবহুল পরিসর রাখার প্রস্তাব এ পত্রে উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী অর্থ বছরে অবশিষ্ট উর্ধ্বমূখী ৫ তলার নির্মানের জন্য অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে, ১২ তলা ভিত্তির এই ভবন নির্মাণ করতে প্রিকাস্ট পাইল বসানোর কাজ শুরুর প্রথম পর্যায়ই হ্যামার ব্যবহারে বিপত্তির কারণে নির্মাণ কাজ এক পর্যায়ে প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল। পরে সমস্যা উত্তরণে অটোমেটিক হাইড্রলিক হ্যামার এনে পাইল বসানো হয়। এ কারণে প্রকল্প ব্যয় আড়াই কোটি টাকা বাড়বে বলে জানা যায়।
এ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ডিজাইন, প্লান ও এস্টিমেট করার সময় যথাযথভাবে সার্ভে করা হয়নি বলে তখন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। প্রকল্প এলাকার আশেপাশে জেলা হাসপাতালের দ্বিতল ভবনসহ অনেক সরকারি বেসরকারি ভবন রয়েছে। তা বিবেচনায় না রেখেই প্রিকাস্ট পাইল বসানোর কাজে ডিজেল হ্যামার ব্যবহার শুরু করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতার কথাও উঠেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের পিরোজপুর বিভাগীয় অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তার অভিমত হাইড্রলিক বা ভাইব্রেটার হ্যামার ব্যবহার করে পাইল বসানোর কাজ করায় প্রকল্প ব্যয় আরও আড়াই কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুন লাগবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট এই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়। যা সম্পন্ন করার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে অনুযায়ী গত বছরের ২০ জানুয়ারী এ নির্মান কাজ শেষ হবার কথা।