ডেস্ক রিপোর্ট ● বরিশালের মুলাদী উপজে’লা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ হোসেনের পরকীয়ায় তছনছ হয়ে গেছে ১৭ বছরের প্রবাসীর সংসার। এক যুগ ধ’রে বিদেশে অবস্থান করলেও উপার্জিত অর্থ পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে দুই সন্তানের জননী আছমা আক্তার লাকী আ’ত্মসাত করেছেন বলে অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে।
লাকী ও মুরাদ বিয়ে করায় অ’সহায় হয়ে পড়েছে ওই সংসারের ১০ ও ৫ বছরের দুই সন্তান। পরকীয়ায় প্রবাসীর সংসার ভা’ঙার পরও অ’ভিযুক্ত কাজী মুরাদের বি’রুদ্ধে এখনো নেয়া হয়নি সাংগঠনিক ব্যবস্থা।
আর অব্যাহত হু’মকিতে মায়ের অবর্তমানে সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে দেশেও আসতে পারছেন না প্রবাসী মোতালেব কাজী। কাজী মুরাদ উপজে’লা পৌরসভা সদরের মৃ’ত আতাহার আলী কাজীর ছেলে।
আছমা খানম লাকী উপজে’লার চরকালেখান ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের সংর’ক্ষিত সদস্য এবং চরকালেখান ইউনিয়নের আবুল হাসেম কাজীর ছেলে কুয়েত প্রবাসী মোতালেব কাজীর স্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে মোতালেব কুয়েতে রয়েছেন।
আছমা খানম লাকী উপজে’লার ষোলঘর গ্রামের আকতার খানের মেয়ে। কুয়েত প্রবাসী মোতালেব কাজীর বাবা আবুল হাসেম কাজী বলেন, সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর লাকী তার দুই সন্তান রেখে প্রেমিক কাজী মুরাদের সাথে পা’লিয়ে যায়।
বড় সন্তান ছেলে রয়েছে আমাদের কাছে। ছোট মেয়ে লাকীর কাছে। এরপর আমার ছেলেকে তালাক দিয়ে মুরাদকে বিয়ে করে। পরদিন ১৭ নভেম্বর লাকী আমার বাড়িতে এলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাড়ির লোকজন। এখন আমরা নাতীকে নিয়ে আ’তঙ্কের মধ্যে দিন কা’টাচ্ছি।
আমার ছেলেও হু’মকি-ধা’মকির কারণে দেশে আসতে পারছে না। দেশে আসলে তাকে হ’ত্যার হু’মকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে দেশে আসার পর কারণে-অকারণে আমার ছেলেকে মুরাদের স’ন্ত্রাসী বা’হিনী বেদম মা’রধ’র করে। বিষয়টি বুঝতে পেরেও দুই শি’শু সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে আমরা সবাই নিশ্চু’প ছিলাম।
কিন্তু এখন তারা বিয়ে করেছে। আমাদের সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমার ছেলেও আমাকে নি’র্দেশ দিয়েছে লাকীকে কোনভাবে যেন ঘরে জায়গা না দেই। মোতালেব কাজীর বাবা আরো বলেন, গত ১৬ নভেম্বর লাকী তার প্রেমিক মুরাদের সঙ্গে পা’লিয়ে যাওয়ার সময় আমার ছেলের পাঠানো নগদ ২০ লাখ টাকা ও ৪ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।
এছাড়া তাদের প্রেমের সম্পর্কের সময় লাকীর মাধ্যমে ১২ বছরে আমার ছেলের উপার্জিত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মুরাদ। লাকীর অ’নৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা সমাজে মু’খ দেখাতে পারছি না। আমার নাতী ঘর থেকে বের হয় না।
সে শি’শু হলেও মায়ের এ স’ম্পর্ককে মেনে নেয়নি। এমনকি সর্বশে’ষ লাকী যেদিন বাড়িতে এসেছিল তার সঙ্গে আমার নাতী দেখাও করেনি। এ ঘটনার জন্য আবুল হাসেম অ’ভিযুক্ত লাকী ও মুরাদের বি’চার দা’বি করেন। তা না হলে এভাবে একের পর এক সংসার ভে’ঙে গিয়ে পরিবারের সন্তানরা সামাজিক মর্যাদা থেকে ব’ঞ্চিত হবে।
গ্রামবাসী জানান, বর্তমানে লাকী তার বাবার বাড়িতে রয়েছেন। তার সাথে ছোট মেয়ে আছে। ওই মেয়েকেও তাদের কাছে নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন আবুল কাসেম। তা না হলে তারা শি’শুটিকে মে’রে ফেলতে পারে বলে আ’শঙ্কা করছেন কাসেম।
আবুল কাসেম দা’বি করেন, আমার ছেলের সাথে ১৭ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় লাকীর। ১৭ বছরের মধ্যে ৭ বছরের অধিক সময় ধ’রে মুরাদের সাথে অ’নৈতিক সম্পর্ক ছিল লাকীর। কিন্তু তা আমরা জানতে পারিনি। ৪ থেকে ৫ বছর পূর্বে জানলেও নাতীদের কথা চিন্তা করে আমরা তাকে বুঝিয়ে ওই পথ থেকে সরে আসতে বলি।
কিন্তু সে তার প্রেমে অ’টল থাকে। এ কারণে আমার ছেলে বিদেশ থেকে আসলে তার সাথে ভালো আ’চরণ পর্যন্ত করতো না লাকী। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর মুরাদের বু’দ্ধিতে লাকী মেম্বর প্রার্থী হয়। সেখানে আমার ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে সে নির্বাচন করে মেম্বর হয়।
মেম্বর হওয়ার পর তার শক্তি আরো বেড়ে যায়। লাকী আমাদের তোয়াক্কাই করতো না। মুরাদ ও মেম্বর এ দুই শক্তি নিয়ে আমাদের সাথে সবসময় খা’রাপ আ’চরণ করতো। কিন্তু লাকীকে যে তালাক দেবে সে সা’হসও ছিল না আমার ছেলের।
এ ব্যাপারে বরিশাল জে’লা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু সভাপতি এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি। সভাপতি সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে বললে আমি অগ্রসর হতে পারি।
জে’লা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন তারা বিয়ে করেছে। তাছাড়া আমি (সভাপতি) মেয়ের সাথে কথা বলেছি। সে জানিয়েছে কাজী মুরাদের বি’রুদ্ধে তার কোনো অ’ভিযোগ নেই। এ কারণে সাংগঠনিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
একটি সংসার ভে’ঙেছে এটি কী অ’পরাধ নয়- এ প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে মোবাইলের লাইনটি কে’টে দেন সভাপতি সুমন। মুলাদী সদর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী হারুন অর রশিদ জানান, ১৭ নভেম্বর রাতে কাজী মুরাদ হোসেন ও আছমা খানম লাকী বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে আমার কাছে আসে। কিন্তু আমি বিয়ে না পড়িয়ে বরিশালের আ’ইনজীবী (নোটারী পাবলিক) সৈয়দ আবুল খায়ের মো. শফিউ’ল্লাহর নিকট পাঠাই। সেখানে লাকী প্রথমে তার স্বামীকে তালাক দেন।
পরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে লাকী ও মুরাদের বিয়ে হয়। আ’ইনজীবী সৈয়দ আবুল খায়ের মো. শফিউ’ল্লাহ রেজিস্ট্রি খাতা না দেখে বিষয়টি বলতে পারবেন না বলে জানান এ প্রতিনিধিকে। পরবর্তীতে তার চেম্বারে গেলে রেজিস্ট্রি খাতা বাসায় আছে বলে টালবাহানা করেন। সোমবার রেজিস্ট্রি খাতা দেখে জানাবেন বলে জানান।
মুলাদীর থা’নার ওসি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগ নেতা কাজী মুরাদের বি’রুদ্ধে কোনো অ’ভিযোগ পাননি। তারা দুইজনে বিয়ে করেছেন। যিনি অ’ভিযোগ দেবেন তিনি তো তার স্ত্রী।
এদিকে আবুল হাসেম দা’বি করেছেন, তিনি লাকীর বি’রুদ্ধে নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়ার লিখিত অ’ভিযোগ দিয়েছেন থা’নায়। পরকীয়া প্রেম করে একটি পরিবারকে তছনছ করেছেন এবং তাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের সামাজিকভাবে হেয় করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ হোসেন বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিং’সার শি’কার।
আমি যদি অ’পরাধ করি তাহলে আ’ইনগত ব্যবস্থা নেয়া হতো। আপনারা থা’নায় খোঁ’জ নেন। আমার বি’রুদ্ধে কোনো অ’ভিযোগ হয়েছে কিনা। একটি চক্র রাজনৈতিকভাবে আমার ক্যারিয়ার ধ্বং’স করার চ’ক্রান্তে মে’তেছে।
আপনি আছমা খানম লাকীকে বিয়ে করেছেন, যার ত’থ্যপ্র’মাণ রয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে কাজী মুরাদের সরাসরি উত্তর, আমি তাকে বিয়ে করিনি। অথচ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত স্বী’কার করেছেন কাজী মুরাদ ও আছমা আক্তার লাকীর বিয়ে হয়েছে।
এ ব্যাপারে সরকারি কৌশলী কেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, পরকীয়া প্রেম নিয়ে সরাসরি কোনো আ’ইন নেই। তবে আ’ইনের ভাষায় পরকীয়াকে আমরা ব্য’ভিচারী বলে থাকি। কোন ছেলে যদি বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, সেক্ষেত্রে মেয়েটির স্বামী ওই ছেলের বি’রুদ্ধে মা’মলা দা’য়ের করতে পারবে।