নারী উদ্যোক্তার পথচলার গল্প

৪৮

উদ্যোক্তা ডেস্কঃ

সহজ বাংলায় বলতে গেলে পুরো ব্যবসায় যিনি সম্পূর্ণ ঝুঁকি নেন তিনিই উদ্যোক্তা। বর্তমানে ২০২০ সালে এসে খুবই প্রচলিত একটি শব্দ উদ্যোক্তা। আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ আছে যারা পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কেউ বা অনলাইনে জামা কাপড়ের ব্যবসা, কারো অনলাইনে হাতের বানানো জিনিসের ব্যবসা, আবার অনেকে বন্ধুরা মিলে ছোটখাটো ব্যবসা যেমন ফুড কার্ট বিজনেস করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর এই দিকে আগ্রহ জন্মায়, আবার কেউ কেউ আরো আগে থেকে পরিকল্পনা করে আগায়।

আমরা যদি আজ থেকে ২০ বছর আগের অবস্থা চিন্তা করি, তাহলে দেখবো দেশে নারীদের অবস্থান খুব একটা ভালো ছিলো না। তারা ঘরের কাজেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নারীদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন ফেসবুকে অনেক নারীরাই বিভিন্ন অনলাইন বিজনেস করছেন। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইউরোপ আমেরিকা থেকে বিভিন্ন পণ্য অর্ডারের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। ঘরে বসেই তারা কাজগুলো করতে পারছেন।

বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এরকম অনেক নারী উদ্যোক্তা আছেন যারা নিজে কিছু করতে চান। কিন্তু তারা পুরো দেশের সবার সামনে স্বীকৃতি না পেলেও নিজেদের ছোট দুনিয়াতে তারা অনেক সফল।

বিবি রাসেল

পুরো বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন এমন অনেক নারীই আছেন। তাদের মাঝে একজন বিবি রাসেল। তিনি তার ফ্যাশন হাউজ ‘বিবি প্রোডাকশন’ এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। তার জন্ম বন্দর নগরী চট্টগ্রামে, বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পড়াশুনা করেছেন কামরুন্নেসা গভঃ গার্লস হাই স্কুল এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনে চলে যান এবং সেখানেই লন্ডন কলেজ অফ ফ্যাশন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর প্রায় কিছু বছর তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের হয়ে মডেল হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন তার স্বপ্নের ‘বিবি প্রোডাকশনস’। তিনি বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটান তার কাজে। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিবি রাসেল তার কাজের জন্য বিভিন্ন সম্মানসূচক এওয়ার্ড পেয়েছেন। তন্মধ্যে ‘বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা’, YODONA এওয়ার্ড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কানিজ আলমাস খান

নারীর রূপচর্চাকে অনেকেই নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। তার মাঝে প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন কানিজ আলমাস খান। দেশের অন্যতম বিউটিশিয়ান তিনি। তার শুরুটাও হয় খুবই ক্ষুদ্র ভাবে। প্রথমে ছোট একটি পার্লার, তারপর আস্তে আস্তে এখন সেই পার্লার একটি ব্র্যান্ড ‘পারসোনা’। তার জন্ম বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে কিন্তু বেড়ে ওঠা ঢাকায়। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিউটিশিয়ান জেরিন আসগর খানের কাছ থেকে ট্রেনিং নিন।

তারই ধারাবাহিকতায় তিনি কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চীন এবং ব্যাংকক থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯০ সালে কেবল মাত্র ৫ জন নিয়ে শুরু করেন তার স্বপ্নের পার্লার। প্রথমে নাম দেন ‘গ্ল্যামার’। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন এবং ১৯৯৮ সালের দিকে পারসোনা নামে পার্লারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৮ থেকে আজ পর্যন্ত পারসোনা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ২০০ জন নারী পারসোনার বিভিন্ন আউটলেটে কাজ করছে।

আইভি হক রাসেল

বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে আরেক নাম হলো আইভি হক রাসেল। বাংলাদেশের নারীরা অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার সুযোগ পাচ্ছেন না। নিজেদের জীবন ধারা কিভাবে উন্নত করবে তা সম্পর্কেও তাদের ধারণা অতি নগণ্য। এসবই ভাবিয়ে তুলে আইভি হক রাসেলকে। তিনি অনেক দিন ধরে ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবেন এবং প্রত্যয়ী হন যে, তিনি নারীদের এমন অবস্থার পরিবর্তন করবেনই। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি maya.com.bd নামক ওয়েবসাইট চালু করেন। এই ওয়েবসাইটটি মেয়েদের জীবনধারা উন্নতির জন্য নানা ভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। এটি মূলত একটি অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন জায়গার নারীরা একসাথে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সমস্যা শেয়ার করে থাকেন। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে তার ওয়েবসাইট এর বেটা ভার্সন চালু করেন। এতে তিনি ব্যাপক সাড়া পান এবং ব্রাক ৪০ বছর পূর্তি ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় রানারর আপ হন। তিনি বর্তমানে মানে এই ওয়েবসাইটে অন্যান্য নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করে যাচ্ছেন।

তাসলিমা মিজি

কেবল যে রূপচর্চা, ক্রাফট প্রভৃতিতে মেয়েরা অবদান রাখছে তা নয়। দেশের প্রযুক্তি বিষয়ক কাজেও রয়েছে মেয়েদের পদচারণা। এক্ষেত্রে একজন সফল উদ্যোক্তা হচ্ছেন তাসলিমা মিজি। তার ক্যারিয়ার জীবন এর শুরুটা খুব একটা মসৃণ নয়। তিনি প্রথমে সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে তা খুব বেশি দিন করা হয়নি। ২০০৮ সালের জুনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘টেকম্যানিয়া’। টেকম্যানিয়া মূলত হার্ডওয়্যার বিষয়ক সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে এখনো সব কর্মক্ষেত্রে ছেলে মেয়েকে সমান ভাবে দেখা হয় না। এখনো অনেকেই মনে করে যে, প্রযুক্তি বিষয়ক সব কাজই ছেলেদের। এরকম ধারণার অনেক মানুষের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাসলিমা মিজিকে কাজ করতে গিয়ে।

কর্মক্ষেত্রে নানা কারণে বৈষম্যের স্বীকার হন শুধু মাত্র তিনি একজন মেয়ে বলে। তার চলার রাস্তা ছিলো বন্ধুর। কিন্তু তার প্রতিবাদী এবং পরিবর্তনশীল চিন্তার জোরে এসব বাধা তিনি খুব সহজে মোকাবিলা করেছেন। তিনি একজন প্রগতিশীল নারী। তার এমন চিন্তা ধারা আরো ১০ জন নারীকে জীবনে কিছু করে দেখানোর খোরাক যোগায়।

এরকম আরো অনেক নারী উদ্যোক্তা আছে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে তারা সবাই কম বেশি সফল।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.