মোঃ নাজমুল হাসান,দেওয়ানগন্জ,জামালপুরঃ- জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকার নদী ভাঙ্গন কবলিত গ্রাম গুলোর মধ্যে সানন্দবাড়ী পশ্চিম পাড়া, মন্ডল পাড়া এবং পাটাধোয়া পাড়া অন্যতম। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এখানকার মানুষের বাপ-দাদার স্মৃতি সংবলিত ভিটে-বাড়ি। শত শত বিঘে আবাদী কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। ভিটেবাড়ি, জমিজমা সম্পদ হারিয়ে কৃষি নির্ভর মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। এমন পরিস্থিতিতে শুকনো মৌসুমে সেই নদীতেই স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে করা হচ্ছে ড্রেজিং এবং বিক্রির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু।
অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া ও প্রতিবাদ করায় হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে সানন্দবাড়ী পাটাধোয়া পাড়ার কিছু সচেতন যুবককে। এমনি একটি ভিডিও গত ২০/১১/২০২০ তারিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপে আপলোড করা হয়। ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, কিছু যুবক বালু উত্তোলনে বাধা দিলে আগত ট্রলির ড্রাইভার তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পরে, এসময় জমির মালিকও অকথ্য ভাষার গালিগালাজ শুরু করে, আর সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে। চরম হেনস্থার শিকার হয়ে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হয় প্রতিবাদকারী যুবকেরা।
ঘটনা পর্যবেক্ষন কালে স্থানীয় লোকজন সাহসীকন্ঠকে বলেন, আমাদের এলাকারই স্বার্থান্বেষী, প্রভাবশালী কিছু অসাধু ব্যক্তির ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলন করা হয়। সবার চোখের সামনেই এলাকার এতবড় ক্ষতি করে নিজেদের পকেট ভারী করলেও এসব দেখার কেউ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে এই বিষয়ে বারংবার অবহিত করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সানন্দবাড়ী পশ্চিম পাড়া গ্রামের একব্যক্তি (০৫ নং ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য মোঃ শাহার আলীকে) উদাহরণ দিয়ে বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা নদী ভাঙ্গন রোধে এসব অবৈধ ড্রেজিং এবং বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, উল্টো নিজেরাই স্যলো ইঞ্জিনের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অবৈধ ব্যবসা করে যাচেছ। আমাদের দেয়া ভোটে জন প্রতিনিধি হয়ে তারা আমাদেরই ক্ষতি করে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যান্ত লজ্জাজনক। ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় উদ্যোগে এলাকাবাসীর অর্থায়নে বাধ নির্মান সহ বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও ভাঙ্গনের ক্ষিপ্রতা আর তীব্র স্রোতের বিপরীতে কোন পদক্ষেপই কাজে আসেনি।
প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিত ও অবৈধ ড্রেজিং আর বালু উত্তোলনের কারনে বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে নদীর ভাঙ্গন বেড়ে যায় দ্বিগুন। যার ফলে, ভিটেমাটি, সহায় সম্বল সব হারিয়ে দরিদ্রতার অতল সাগরে হারাতে বসেছে এই এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো।
দারিদ্রতার কারনে দিন দিন সহজ সরল, শান্তিপ্রিয় এসব মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ড্রেজিং করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা এবং নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে যথাযত কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি ও হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন অত্র এলাকার জনগণ।