ডেস্ক রিপোর্টঃ
দেশে যখন সর্বাত্মক লকডাউন চলছে পরিচয়পত্র চাওয়া নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে একজন চিকিৎসকের বাকবিতন্ডার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও তে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি প্রাইভেট কারযোগে এলিফেন্ট রোডের ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের সহযোগিতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট তার গাড়ি থামিয়ে ডাক্তারের এপ্রোন পরিহিতা জেনির পরিচয়পত্র দেখতে চান। জেনি জানান, তিনি পরিচয়পত্র বাসায় রেখে এসেছেন। ভিডিও তে দেখা যায়, একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেন ডাক্তার জেনি। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে পুলিশ সদস্যদের সাথে উত্তেজিত ব্যবহার করতে থাকেন। তিনি বলেন, করোনায় জীবন গেছে কয়জন ডাক্তারের, আর আপনারা কতজন মরছেন। আমার কাছে আবার চান মুভমেন্ট পাস। এ সময় নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম ওই নারী ডাক্তারকে বলেন, আপনি আমাদের ধমক দিচ্ছেন কেন? জবাবে ডাক্তার বলেন, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর মেয়ে। জবাবে ওসি বলেন, আমিও মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। আপনি আমাকে শোনাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার কথা।
তখন ঐ নারী ডাক্তার আরও বলেন আমি বিএসএমএমইউ প্রফেসর, বীর বিক্রমের মেয়ে। আমাকে আপনারা হয়রানি করতে পারেন না।
পরে পুলিশের আরেক সদস্য বলেন, আপা আপনাকে তো হয়রানি করা হচ্ছে না। আপনার কাছে পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে।
একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ডাক্তার জেনি বলেন, তুই মেডিকেলে চান্স পাস নাই, তাই তুই পুলিশ। আমি চান্স পাইছি তাই আমি ডাক্তার। এসময় নিজ গাড়িতে ওঠে যান ওই নারী চিকিৎসক। এসময় পুলিশের এক সদস্য ওই নারীকে বলেন, আপনি আমাকে তুই তুই করে বলছেন কেন? এক পর্যায়ে পুলিশকে তিনি হয়রানি করলে আন্দোলনের হুমকি দেন। পুলিশ জবাবে বলছে, আমাদের আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছেন। এসময় পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও থেমে থাকেন নি তারাও
গাড়ির গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে তখন ওই নারী ডাক্তারের সঙ্গে উত্তেজিত ভাবে কথা বলছিলেন। এ সময় ওই নারী ডাক্তার জেনি তাদের বলেন, আর আমি কে, সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা। এই কথা বলে এক উর্ধ্বতন কাউকে কল করছিলেন। ফোনে ওপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে পুলিশ তাকে হয়রানি করছে জানিয়ে ফোনটি পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেন কথা বলার জন্য। এসময় তিনি একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ফোনে কথা বলেন ম্যজিস্ট্রেটও। একপর্যায়ে ডাক্তারের অন্য সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে বিষয়টি সমাধান হয়। প্রায় আধা ঘন্টা পরে ডাক্তার জেনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হাসি ঠাট্টা তোলপাড় হয়।
অনেকে ভিডিও টি শেয়ার ক্যাপশনে লিখেন ডাক্তার বড় না পুলিশ বড়। অনেকে আবার লিখেন সবখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে ফায়দা লুটা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরিচয় দেওয়ায় ফেসবুকে আলোচনা চলছে কোটা পদ্ধতি নিয়েও।
শুধু সাধারণ মানুষ নয় এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে পোস্ট করেন পুলিশ এবং ডাক্তারেরা ও। সালেহ ইমরান নামের পুলিশের একজন এসআই ঘটনাটির ভিডিওটি তার ব্যক্তিগত আইডিতে শেয়ার করে লেখেন, উনি কত বড় ডাক্তার যে নিজের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকেই মানেন না।
মন্ত্রলায়ের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে তিনি সেটা লংঘন করেছেন৷ তর্কে লিপ্ত হয়েছেন। দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারদের এক রকম হুমকি দিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে যদি মুভমেন্টে পাসও সাথে রাখতেন তিনি সেটাও রাখেননি৷ এই হলো একজন প্রথম শ্রেণির সম্মানিত নেটিজেনের আচরণ!
অন্য দিকে মাহাবুবুর রহমান নামের এক ডাক্তার পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘আশপাশ দিয়ে হাজারো মানুষ যাচ্ছে, কারো মুভমেন্ট পাস দেখা লাগছে না, আপার গায়ে অ্যাপ্রোন, গাড়িতে স্টিকার থাকার পরও উনার মুভমেন্ট পাসটাই দেখতে হবে, কারণ কি? সাদা অ্যাপ্রন দেখলেই গায়ে চুলকানি ধরে কেন? আপাকে ইচ্ছেমতো ইরিটেট করে, অপমান করে টেম্পার হারানোর পর ভিডিও করে ভাইরাল করা, অসদাচরণের মধ্যে পড়ে না?
কেউ কেউ আবার বলছেন, উভয়পক্ষই নমনীয় আচরণ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। অন্তত এক পক্ষের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকা উচিত ছিল।