ঠাকুরগাঁও জেল প্রতিনিধি,মোঃআব্দুল ওহাব
ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষা ছাড়াই ঘুরে যেতে হচ্ছে করোনা উপসর্গ রোগীদের
আধুনিক সদর হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিনি ভিড় করছে শত শত রোগী। যাদের মধ্যে সিংহভাগের রয়েছে করোনার উপসর্গ। করোনা পরীক্ষা করানোর জন্যে গাদাগাদি করে হাসপাতালে জটলা বাধছে তারা। তবে পরীক্ষা করাতে না পেরে হতাশ হয়েই ফিরে যেতে হচ্ছ অধিকাংশ রোগীকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে দিনে ৬০ থেকে ৮০ জন রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক করোনা উপসর্গ রোগীকে পরীক্ষা ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে জনবল সংকটের কারণে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে রোগীদের।
মঙ্গলবার করোনা পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যেতে দেখা যায় শহরের জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনকে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেলা ১১টার সময় এসেছি। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টোকেন নিয়েছি। এরপর ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করতে আসি। এখন তারা কাল আসতে বলছে।
বিষয়টি আমাদের জন্যে অনেক বিভ্রান্তজনক।
ব্যবসায়ী হিমেল তিগ্যা বলেন, কাল এসে ফিরে গেছি। আজও ফিরে যেতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে আসতেই আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আর সম্ভব না, যা হবে হোক! আমি আর পরীক্ষা করাতে আসবো না।
দেশের উত্তর সীমান্তের এ জেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেই মোতাবেক বাড়ছে করোনা পরীক্ষার চাপ। যা সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুন মাসে বেড়েছে ১৫ গুণ।
ঠাকুরগাঁওয়ে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৭৭ জন। আর শুরু থেকে মৃত্যুর ৯৫ জনের মধ্যে জুন মাসেই মারা গেছেন ৪৭ জন। করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু-এই দুই সূচকেই জুন মাস করোনা পরিস্থিতি গত ১৪ মাসকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন অবস্থায় সঠিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা না গেলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল ওহাব সাথে। তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষা না করে এভাবে যদি রোগীদের ফেরত দেওয়া হয়। তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। এমনটা হলে এই জেলার জন্যে অনেক ভয়ংকর একটি সময় অপেক্ষা করছে। আমরা এমনিতে কম সতর্ক। তার মাঝে যদি নিজের করোনা সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারি, তাহলে আরও অসতর্ক হয়ে যাব। লোকালয়ে মিশে সংক্রমণ বাড়িয়ে দেব। তাই দ্রুতই কোনো উপায় বের করে শত ভাগ রোগীর করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাজিরুল ইসলাম চপল জানান, আমাদের জেলায় দিনদিন করোনা রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়নি। আমাদের হাসপাতালে জনবল সংকট। সেই কারণে সঠিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। প্যাথলজি, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, নমুনা নেওয়া, সিরিয়াল নেওয়া-এসব কাজের জন্য বিভাগে ২৪ ঘণ্টার জন্যে আমাদের কর্মকর্তা রয়েছে মাত্র ছয়জন।
করোনা পরীক্ষা ছাড়াও হাসপাতালের বাকি সব পরীক্ষা এই জনবলেই করাতে হচ্ছে। তাই পরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের মাঝে থেকে ৬০ জন আর ভর্তি থাকা রোগীদের মাঝে থেকে ২০ জনের মতো নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করছি। বাকিদের পরবর্তী দিনে আসতে বলা হচ্ছে। রোগীদের পরীক্ষা ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে আমরাও চিন্তিত। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণভাবে উপায়হীন।