কর্মীদের বেতন বাড়াবে জাপানের অধিকাংশ কোম্পানি

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
অর্ধেকেরও বেশি জাপানি কোম্পানি এ বছর কর্মীদের মজুরি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ক্রমবর্ধমান ভোক্তামূল্যের সঙ্গে মোকাবিলায় সহায়তা করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জাপান বর্তমানে ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও দ্রুততম মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিশিদা প্রশাসন বারবার কোম্পানিগুলোকে কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জোরালো প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানে প্রথম সাড়া দেয় পোশাক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ইউনিকলোর নিয়ন্ত্রক ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানি। গত সপ্তাহে কোম্পানি জানায়, চলতি বছর থেকে তারা কর্মীদের বেতন প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে। এরপর থেকেই অন্য বৃহৎ কোম্পানিগুলোও একই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে।

প্রতি বছরের বসন্ত মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি ও মার্চে) জাপানী শ্রমিক ইউনিয়ন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেতনবিষয়ক আলোচনা হয়। এ আলোচনাকে সামনে রেখে রয়টার্সের করা জরিপে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ২৪ শতাংশ ব্যস্থাপক জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত নির্ধারিত বেতনবৃদ্ধির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে মূল বেতন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে, ২৯ শতাংশ ব্যবস্থাপক শুধু নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া ৩৮ শতাংশ কোম্পানি বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। রাকুটেন সিকিউরিটিজের প্রধান কৌশলবিদ মাসায়ুকি কুবোতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বারবার মজুরি বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কথায় নেওয়া হয়নি, বরং কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য অর্জনে আরও ভালো মানবসম্পদ প্রয়োজন বলে মজুরি বাড়াতে সম্মত হয়।

তিনি আরও বলেন, যদি কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক না হয়, তাহলে মজুরিবৃদ্ধি উৎপাদন খরচ বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেভ তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। রয়টার্সের জরিপ অনুযায়ী, জাপানের ৩৪ শতাংশ কোম্পানি কমপক্ষে ৩ শতাংশ মজুরিবৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে, যা অক্টোবরে চালানো জরিপের তুলনায় এবার মজুরি বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া কোম্পানির সংখ্যা ১০ শতাংশ বেশি। জানা যায়, সামরিক ব্যয় বহনের জন্য জাপানী প্রধানমন্ত্রী কিশিদা দেশটির বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪ শতাংশ কিংবা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্সের অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের আহ্বান জানান। নতুন এ পরিকল্পনা ২০২৪ অর্থবছর বা তার পরে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৯৫টির মধ্যে ৫৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ব্যয়ের ওই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও বাকিগুলো তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তার বদলে ২৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শুধু করপোরেট করের হার বাড়ানোর বিষয়ে রাজি হয়। অন্যদিকে, রয়টার্সের অক্টোবরের সমীক্ষায় ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সামরিক ব্যয়ের উদ্দেশ্যে করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। আর ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মত দেয় করপোরেট ট্যাক্স তুলে নেওয়ার পক্ষে। জাপানের একটি সিরামিক কোম্পানির ব্যবস্থাপক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিরক্ষাবাবদ বর্ধিত ব্যয় কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই করপোরেট করের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটি মজুরিবৃদ্ধি ও মূলধন বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.