মেহেদী হাসান, উপজেলা প্রতিনিধি(নালিতাবাড়ী): এক সময় এ অঞ্চলে উৎপাদিত হতো উন্নত মানের পাট। পাটের প্রতিশব্দ নলিতা বা নাইল্যা। এই নলিতা বা নাইল্যা থেকেই উপজেলার নাম হয়েছে নালিতাবাড়ী।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৭৮৭ সনের ১লা মে ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হলে নালিতাবাড়ীতে এ জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৬৭ সনের ২০ মার্চ গভর্নমেন্ট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নালিতাবাড়ী থানা। তখন এ থানার সীমানা ছিল উত্তরে ভারতের আসাম রাজ্য,দক্ষিনে ব্রক্ষপুত্র নদের পিয়ারপুর ঘাট,পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং পশ্চিমে শ্রীবরদী থানা। মহকুমা ছিল জামালপুর।
আবার ১৯৭৯ সনে জামালপুর জেলায় ও শেরপুর মহকুমায় উন্নীত হয়। তখন নালিতাবাড়ী থানা যথাক্রমে জামালপুর জেলা ও শেরপুর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত হয়। এর ৫ বছর পর ১৯৮৪ সনে শেরপুর জেলা হলে নালিতাবাড়ী শেরপুর জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। পথ পরিক্রমায় দেখা যায়, ১৮৬৭ সালের ২০ মার্চ নালিতাবাড়ী থানা ১৯৬০ সনে উন্নয়ন সার্কেল, ১৯৮৩ সনের ২৪ মার্চ মানউন্নীত থানা এবং ১৯৮৪ সনে নালিতাবাড়ী উপজেলা হিসেবে উন্নীত হয়।
১৯৯১ সানে নালিতাবাড়ী উপজেলার পরিবর্তে থানা এবং ১৯৯৭ সনে পুনরায় উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও জানকুপাথর ও দোবরাজপাথর ছিলেন উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের দুইজন বিদ্রোহী এবং শেরপুরে সংঘটিত পাগলপন্থি বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক। তারা গারো-হাজংদের নেতা টিপু শাহের অনুগামী ছিলেন এবং ১৮২৭- ১৮৩৩ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রজাবিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন। শেরপুরের পশ্চিমদিকে করৈবাড়ি পাহাড়ের পাদদেশ জানকুপাথরের একটি প্রধান আস্তানা ছিলো। ১৮৩১ সালে ময়মনসিংহের কালেক্টর নতুন বন্দোবস্ত “অষ্টম আইন” হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বিদ্রোহ চালিয়ে যান জানকুপাথর ও দোবরাজপাথর।
তাদের নেতৃত্বে শেষ পর্যায়ে সংগ্রামের রূপ চরম আকার ধারণ করে। ১৮৩৩ সন পর্যন্ত জানকুপাথর করৈবাড়ি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ও দোবরাজপাথর নালিতাবাড়ি উপজেলার নিকটবর্তী কোনো একস্থান থেকে শেরপুর অভিমুখে দ্বিমুখী আক্রমণ পরিচালনা করেন। বিদ্রোহী পাগলপন্থীগণ শেরপুরের জমিদারবাড়ি, কাছারিবাড়ি, জমিদারদের আশ্রিত লাঠিয়াল বাহিনীর সর্বস্ব লুট করে ও থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে শেরপুর জনশূন্য হয়ে পড়ে। এগার-বারটি ক্ষেত্রে সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে ইংরেজ সরকার বিদ্রোহ সংশ্লিষ্ট লোকজন ও নিরীহ লোকজনকে পাইকারিভাবে হত্যা শুরু করে এবং বিদ্রোহের নেতাদেরকে ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। অতপর বিদ্রোহের দলপতিরা ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করে। জানকুপাথর উত্তরের পাহাড়ে পালিয়ে যান এবং দোবরাজপাথর পূর্বাঞ্চলে আত্মগোপন করেন। দুর্গাপুর উপজেলার ‘দোবরাজপুর’ গ্রাম দোবরাজপাথরের স্মৃতি বহন করছে।এ প্রান্তিক অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চার ব্যাপ্তিকাল খুব একটা বেশী নয় গারো হাজং-হদি-ডালুদের লৌকিক পারলৌকিক বোধাশ্রিত প্রকৃতিবান্ধব সংস্কৃতি চর্চা ও চর্যা বরাবর ছিল এই জনজাতিদের মাঝে। লিখিত রুপের চেয়ে মৌখিক নির্ভরতার কারনে সেই লোকসাহিত্য যথাযথ ভাবে সূত্রায়ন হয়নি।