মোঃ রফিক ভূঁইয়া খোকা
বিভাগীয় প্রধান ( ময়মনসিংহ)
সাহসী কন্ঠ
নিজের ঘরের ঈমান আগে ঠিক করা অধিকতর জরুরী বলে মনে করি । দাঁড়ি রাখতে গেলে পিতা-মাতা বা পরিবারের কেউ প্রায়ই বলে টাকা নিয়ে যা জঙ্গলগুলো ( দাঁড়িগুলো ) সাফ করে আয়, তোকে তো ছাগলের মত দেখাচ্ছে। এখনই ধর্ম-কর্ম করতে হবে না, বয়স হোক ইত্যাদি। আবার বয়সকালে ধর্ম পালন করলে কিংবা পরিবারের লোকজনদেরকে ধর্ম পালনের কথা বললে, উৎসাহিত করলে, তাগাদা দিলেও তখন পরিবার থেকে জানিয়ে দেয়, বুড়ো বয়স তো ভীমরতিতে ধরেছে। এরুপ বিরুপ মন্তব্য, কটুক্তি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, বুঝে-নাবুঝে করার সাথে সাথে আমাদের ঈমান থাকে, কি থাকে না, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি। আমাদের ঘরেই তো বর্তমানে আমাদের ঈমান নিরাপত্তা-হীনতায় টলায়মান। এ তো গেলো ঘরের অবস্থা। বাহিরে তো আজকাল মূখে খুব রস লাগিয়ে একটি কথা বলা হচ্ছে, বুঝানো হচ্ছে, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” ইহা কি আদৌ সম্ভব? এরুপ বলাতে, বক্তা ও শ্রোতার ঈমানের হালত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, আমরা মুসলমানরা কি কখনো ভেবে দেখি? আমাদের ভাবোদোয়ে কি কোন সাড়া জাগে? যাহোক আমরা মুসলমানরা নিজেরা ধর্ম কতটা জানি, মানি, পালন করি। অন্যভাবে ব্যক্তি, পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মের কতটুকু অংশ বিদ্যমান আছে কিংবা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি আমরা – খতিয়ে দেখা উচিৎ। নিজেরা, নিজেদের সন্তান-সন্ততি অবলীলায় অশ্লীলতায় ডুবে আছি, ঘরে নিয়মিত কুরআন পড়া না থাকলেও ডিস এন্টিনা ও ওয়াইফাই সংযোগ লাগবেই, অধিকাংশ বাংল- ইংরেজি শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরাই জীবনভর নামাজের ব্যাপারে গাফেল থাকছে, জানে না পাক-সাফ অর্থাৎ পবিত্রতা সম্পর্কীয় মাসআলা, পূজায় না গেলে মূসলমানদের তো পেটের ভাত হজম হয় না, মাজার ও কবর পূজারী এবং ভন্ড পীর-দরবেশের আস্তানা, মসজিদ-মাদ্রাসায় শ্লীলতাহানী শিক্ষক কর্তৃক নারী ধর্ষণ, হারাম আয়-উপার্জনে পোলাও-কোর্মা খেয়ে ভূরিভোজন, সুদ-ঘোষের ছড়াছড়ি, দুনিয়ার সামান্য স্বার্থে কিংবা কোন ব্যক্তি, দল, মতের জন্য এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে মারামারী,খুন,জখম কত লোক ঈমানহারা জীবন যাপন করছে কিংবা বেঈমান হয়ে মারা যাচ্ছে তাদের জন্য কোন বিশেষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও করণীয় না থাকা, আত্নীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্নতা,আইন করে পিতা-মাতা ও সন্তানের অধিকার আদায় করতে হচ্ছে,প্রতিবেশীদের সাথে বৈরীভাব, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রকৃত অপরাধীর যথার্থ বিচার ও শাস্তি না হওয়া ইত্যাদি এরুপ শর্ত- সহস্র প্রকারের জীবন ও ঈমান বিধ্বংসী কর্ম করার দ্বারা ঘরে-বাহিরে, বক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রে আমরা মুসলমানদের ঈমান কতটা আছে, কতটা হারিয়েছি, কতটা শক্তিশালী এসবে আমাদের নেই কোন মাথাব্যথা, চেতনা। আর ঐ সকল অপকর্ম, অবৈধ ক্রিয়াকলাপ করা বা এগুলোর সাথে জড়িত থাকার দরুন দাঁড়ি-টুপি, পাঞ্জাবী-পায়জামা সর্বস্ব বেশধারী মুসলমানদের সম্পর্কে ইহুদী, খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধদের কটু কথা,কুধারনা পোষণ করা তো অস্বাভাবিক বিষয় না । এ পাপাচার, বেঈমানী কর্ম আমরা মুসলমানদের উদাসীনতা, অজ্ঞতা, অপারগতা ,ব্যর্থতা যাই বলি, এ জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। এর ফল আমাদের ওপরই বর্তাবে । আর সে পরিণতির চূরান্ত অংশই হচ্ছে ইহুদী, খ্রীস্টান, হিন্দু এমনকি কিছু হতভাগা মুসলমান কর্তৃক ইসলাম ধর্ম ও সে ধর্মের কান্ডারী, মহা মানব আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করা, গালি দেওয়া ইত্যাদি। পাপাচার, ব্যর্থতা দিয়ে কোন ব্যক্তির জীবন সফলতা যেখানে সম্ভব নয় সেখানে ধর্মের সফলতা বা পরিপূর্ণ ঈমান কী করে সম্ভব । আশা করাও অজ্ঞতার শামীল। এমনকি কপটতা। আসুন নিজেরা সংশোধিত হই, অন্যায়-অবিচার তথা অবৈধ ও হারাম ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকি । নিজেদের সংশোধন,ভালত্ব ইত্যাদির সক্রিয় ও অব্যাহত কার্যকারিতা পালন, প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠাই হবে সকল ভুল ধ্যান-ধারনা, বিরুদ্ধাচরণ, কটুক্তি ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল হাতিয়ার । নতুবা নবী, ইসলাম ও মুসলমানদের তথাকথিত কটুক্তিকারী ও তাদের সেসকল ঘৃণ্য মন্তব্য, কর্মকাণ্ড ও পাপাচারের বিরুদ্ধে কেবল মিছিল করা অরণ্যে রোদন করা ছাড়া কিছু নয়। সুদূর ফ্রান্সের কোন খ্রিস্টান নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছে, গালমন্দ করেছে সে জন্য আমাদের ক্রোধের শেষ নেই, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। অথচ সারা জীবন আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন না করা, নবী (সঃ)-এর নূরানী সুন্নতের অনুসরণ না করা ইত্যাদির ধর্মের আবশ্যিকতার স্বপক্ষে আমাদের রাগ ওঠে না, মনঃকষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে নিজেদেরকে অপরাধী ভাবতেও মন চায় না ।
অপরের অন্যায়-অনাচার, বিরুপ মন্তব্য, কটুক্তির বিরুদ্ধে একত্রে সোচ্চার হতে পারি, ঐক্য গড়ে তুলতে পারি কিন্তু নিজেদের দূর্বলতা, ব্যর্থতা ও করণীয় ব্যাপারে উপলব্ধি জাগ্রত হয় না, সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেষ্ট হতে পারি না। ইহা কি সত্য প্রতীয়মান নয় ? ইহা কি অধিকতর জরুরী নয় ? হিন্দু,বৌদ্ব, ইহুদী, খ্রীষ্টান তাদের তো ঈমানই নেই । আর মুসলমান সে তো ঈমান ওয়ালা । একজন মুসলমান ঈমানছাড়া হওয়া, কোন খ্রীষ্টান নবীকে গালী দেওয়ার চেয়ে অধিকতর দুঃখজনক, বেদনাদায়ক ও মহা পাপাচার নয় কি ?