মোঃমোকসেদুর রহমান,ঠাকুরগাঁও : আগাম জাতের ফুলকপি চাষে চলতি মৌসুমে ব্যাপক লাভবান হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায়,উপজেলার কৃষকরা আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও বিমানঘাঁটি এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, ধান-গম চাষ করে আমরা খুব একটা লাভবান হতে পারিনি। ধান চাষ করে প্রত্যেকবার লোকসান গুনতে হয়। তাই ফুলকপি চাষ করছি। শীতকালে ফুলকপির ভরা মৌসুমে দাম একটু কম হয়। তবে অন্য সময়ে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই আমরা সারা বছরই এখন ফুলকপি চাষ করছি।
তিনি আরো জানান, এ বছর আমি আমার দুই বিঘা জমিতে আগাম লিডার জাতের ফুলকপির চাষ করেছি। বিঘায় প্রায় ৬ হাজারের মতো গাছ রয়েছে। খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা। বাজারে এখন যে দাম রয়েছে তাতে আমি বিঘাপ্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা পাবো।
আরেক কৃষক আসাদুল হক বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষ অধিক লাভজনক। আমি দেড় বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছি। জমি থেকেই পাইকারী ক্রেতারা ৩০-৩৫ টাকা কেজি করে ফুলকপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় এক বিঘা জমিতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
সিদ্দিক আলী নামের আরেক কৃষক জানান, এর আগে দেখা যেত শীতকালে জমিতে ফুলকপির চাষ হতো। সে সময় ভালো দাম পাওয়া যেতো না। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা এখন সারা বছর ফুলকপির চাষ করি। তিনি আরও জানান, এখানকার ফুলকপি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রপ্তানি করি। এছাড়া স্থানীয় হাট-বাজার ও ঠাকুরগাঁও শহরেও বিক্রি করি।
ধান, গম, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজের তুলনায় অধিক লাভ এই আগাম ফুলকপিতে। তাই এই ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মানুষ এখন ফুলকপি চাষে ঝুঁকছে।
একই এলাকার কৃষক মারুফ জানান, আমরা স্থানীয় বাজারের চেয়ে বাইরে রপ্তানি করলে ভালো দাম পাই। এজন্য কৃষি অফিসের সহায়তায় আগাম ফুলকপি উৎপাদন করে বাজারজাত করছি। এছাড়াও কৃষি বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা ন্যায্য মূল্যে ফসলাদি বিক্রি করতে পারছি। সমবায় ভিত্তিকভাবেও ফুলকপিসহ অনান্য সবজি চাষাবাদ করে অন্য জেলায় বিক্রি করি। এতে সবজির ন্যায্য মূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। চাষিরা আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। ফলে তারা ফুলকপি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সাধারণত শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এছাড়া গ্রীষ্মকালেও চাষের উপযোগী জাত রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনোয়ার হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় এ চাষে বেশি ঝুকে পড়ছে কৃষকরা। এ বছর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় মোট ২৮১ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আবাদ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।