মোঃ রফিক ভূঁইয়া খোকা,ব্যুরো প্রধান,ময়মনসিংহঃ অভিশংসন বা অভিযোগ ( Impeachment) কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরোপিত বা অভিযুক্ত অপবাদ। সাধারণত কোন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিশেষভাবে বা আইনী প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়াই হলো অভিশংসন। এক্ষেত্রে কেবল কোন প্রেসিডেন্টকেই কেবল অভিশংসিত করা যাবে বিষয়টি তা নয়। রাষ্ট্রপতি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি বা সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও Impeachment খাটতে পারে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি, অসদাচরণ, রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি কারণে অভিশংসন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, কোন রাষ্ট্রপ্রধান বা অপরাপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার মানেই তাকে অপসারিত করা হয়ে যায় না, অভিশংসন নয়। অভিশংসন হওয়া বা না হওয়া যাদের হাতে অপসারণের ক্ষমতা আছে তাদের সংখাগরিষ্ঠ রায়ের ওপর নির্ভর করে মূলত অভিশংসন। অভিশংসনের বিষয়টাকে আমরা অনেকটা এভাবে বলতে পারি, সাধারণক্ষেত্রে show cause( কারণদর্শানো) আর বিশেষক্ষেত্রে Impeachment (অভিশংসন)।
সাধারণত পার্লামেন্ট, জাতীয় পরিষদ, কাউন্সিলের হাতে অভিশংসনের পর অর্থাৎ অভিযোগ উত্থাপনের পর অপসারণ করার ক্ষমতা থাকে। তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধানভেদে অভিশংসন নীতি ভিন্ন হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র অামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন একটি বহুল আলোচিত বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এতে করে সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ইচ্ছা করলেই কোন খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যা রাষ্ট্র ও জনগণের চাওয়া -পাওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক হয়।
আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করে তারা এই অভিশংসন প্রক্রিয়ায়। কংগ্রেসের অংশ প্রথম কক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অর্থাৎ অভিযোগ উত্থাপিত হয়। সেখানে সাধারণ সংখ্যাহরিষ্ঠতায় পাস হয়ে পরের ধাপে বিচার অনুষ্ঠিত হবে সিনেটে যেটা কংগ্রেসের দ্বিতীয় অংশ। এখানে সিনেটররা বিচারক বা জুরি হিসেবে কাজ করেন। মূলত তারাই সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট বা অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী বা নির্দোষ। এই সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটর অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলেই বা মতামত হলেই অভিযুক্ত ব্যক্তি অপসারিত বা অভিশংসিত হবে। এই বিশেষ প্রক্রিয়াই মূলত ইমপিচমেন্ট অব আমেরিকা।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির অভিশংসনঃ সংবিধানের ৫২- এর ১ ধারা অনুযায়ী সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাবে। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত অভিযোগের লিপিবদ্ধ বিবরণ স্পীকারের নিকট প্রদান করতে হবে। তারপর সংবিধান প্রণীত নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য সংখ্যার অন্তত দুই – তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলে ঘোষণা করে সংসদ কোন প্রস্তাব গ্রহণ করলে ঐ দিনই রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।